ঈদের চাদ দেখা নিয়ে মত বিরােধ - বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী এর জীবন Part 15 - Boro Pir Abdul Kadir Jilani Ar Jiboni

Abdul Kadir Jilani Ar Jiboni

ঈদের চাদ দেখা নিয়ে মত বিরােধ

উনত্রিশে রমযান
জিলানবাসীদের মধ্যে মতবিরােধ দেখা দিল। কেউ বলছে চন্দ্র উদয় হয়েছে আবার কেউ বলছে।
উদয় হয়নি। কাজেই পরদিন ঈদ হবে কিনা এ নিয়ে চরম বিশৃংখলা দেখা দিল। পরদিন সকালে
লােকজন হযরত আবু সালেহ মূসা (রহঃ)-এর বাড়ির দিকে গমন করল এবং সেখানে তারা
জমায়েত হল। তাদের আগমণের কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা বলল- ঈদের চাদ উঠা নিয়ে
আমাদের মধ্যে মতবিরােধ দেখা দিয়েছে।

লােকজনের কথা গুনে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের
জিলানী(রহঃ)-এর মাতা উম্মুল খায়ের বললেন, আমার শিশু সন্তানটি সকাল থেকে এখন পর্যন্ত
দুধ পান করেনি। এতে মনে হয় গতকাল চন্দ্র উদয় হয়নি। কারণ এ শিশ রমযানের পবিত্রতা
রক্ষার্থে দিনের বেলায় দুধ পান বন্ধ রেখেছে। উখ্মুল খায়ের (রহঃ) আরও বললেন, এটা শুধু
আজকের ঘটনা নয় প্রথম রমযান থেকেই এ অবস্থা লক্ষ্য করছি। তারপর তিনি তার পুত্রের সে
জন্মদিনের চন্দ্র উদয় সম্পর্কিত ঘটনাটি সকলকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। তখন সমবেত জনমণ্ডলী
আর কোন ধরনের দ্বিরুক্তি না করে চলে গেল। তারা সবাই এ শিশুর সিদ্ধান্ত মেনে নিল এবং
সকলে ঐ দিনের রােযা পালন করল। আল্লাহর রহমতে শিশু আবদুল কাদের জিলানী মায়ের

কোলে বড় হতে লাগলেন। ছয় বৎসর বয়সে উপনীত হলেন। শিশুর মত চঞ্চলতা তার মধ্যে
ছিলনা। শান্ত স্বভাবে অধিকারী বালক খেলাধূলা থেকে দূরে অবস্থান করতেন। সমবয়সী সাথীদের
সাথে অযথা সময় নষ্ট করতেন না। তার চরিত্রে ভাবগাম্ভীর্য লক্ষ্য করা গেল। তিনি শুধু চার দিকের
সৌন্দর্য অবলােকন করে চিন্তাভাবনা করতেন। কোন রহস্যের সন্ধানে যেন তার অন্তর সবসময়
অস্থির থাকত। তাঁর চরিত্রে আল্লাহ্ তা'আলা বিনয়, সহিষ্ণুতা, নম্রতাসহ এমন এক ভাবগা্জীর্য
সংযােজন করেছিলেন যার সৌন্দর্যে তাঁকে আলাদা ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। তাঁর সমবয়সী
বালকদের সাথে তার ব্যবধান পরিলক্ষিত হতে লাগল।
বেলা অপরাহ্ন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। ঈদের চাঁদ ওঠার ঘটনা নিয়ে

অদৃশ্য শক্তির প্রভাব

বস্তুতঃ যে আধ্যাত্মিক শক্তির প্রভাব জন্ম হতেই তাঁর মাঝে প্রকাশিত হয়েছিল। তাই তাকে
সকল পার্থিব বিষয়-বস্তুর সংস্পর্শ হতে বাচিয়ে রাখতে ছিলেন। হযরত আবদুল কাদের জিলানা
(রহঃ)-এর জীবনে দ্বভাব চুরিত্রে দেখা দিল ধৈর্য, সংযম, ধীরস্থিরতা ও গাষ্ভীর্যের প্রতিচ্ছবি। এ
বয়সে এ গতি প্রকৃতি যদিও অকল্পনীয়। তবুও তাই তাঁর মনের মধ্যে দখল করে নিল। পৃথিবীর
লীলাময় বৈচিত্র অবলােকন করে সবসময়ই কি যেন এক চিন্তায় তিনি বিভেভার থাকতেন।
অধিকাংশ সময়ই চিন্তার মধ্যে কেটে যেত। আধ্যাত্মিক শক্তির যে উজ্জ্বল বিকাশ তাঁর জন্মের শুরু
হতেই বিকশিত হয়েছিল। উহার তীব্র প্রভাব ও প্রতিক্রিয়াই তাঁকে সমস্ত খনভঙ্গুর বস্তুর বৃথা
সংসর্গ হতে দূরে রাখত।

তার পুণ্যময় জীবনের প্রতিটি সময়ই অদৃশ্য হাতের ইংগিতের দ্বারাই সংঘটিত হত। তিনি
ছিলেন মহান আল্লাহ্ তা'আলার মনােনীত পথের দিশারী। কর্তব্য ও দায়িত্বের সীমাহীন পথ তাঁর
সামনে বিস্তৃত ছিল। এ জন্যেই অল্প বয়সে তিনি সুদূর প্রসারী কর্মজীবনের প্রস্তুতির প্রতি অদৃশ্য
আহবানে সচকিত হয়ে উঠতেন। অবিনশ্বের পৃথিবীর বৈচিত্রময় লীলা চাঞ্চল্যের আকর্ষণে তাঁর
পবিত্র জীবনের লক্ষ্য ও অভীষ্টের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন,
জাগ্রত মনােভাব, সুদূর প্রসারী দৃষ্টি ও অবিচল প্রচেষ্টা সর্বদাই তাঁর যাত্রাপথকে সুগম করে দিত।

সাইয়্যেদ আবদুর রাজ্জাক হতে বর্ণিত আছে- হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী
(রহঃ) বলিয়াছেন- বাল্যকালে সমবয়সি সাথীদের সাথে মিশিবার আকাঙ্খা আমার মনে যখনই
উদয় হত, তখুনই "আমার কানে অদৃশ্য আহ্বান ভেসে আসত। ইলাইয়্যা ইয়া মুবারক। হে
ভাগ্যবান শিশু! তুমি আমার দিকে আস। এ আহ্বান পরিষ্কার আমি শুনতে পেতাম। কিন্তু কে এ
আওয়াজ দিচ্ছে তা চোখে দেখতাম না। আবার কখনও গম্ভীর আওয়াজ শুনে আমি ভীত হয়ে প্রাণ
পনে দৌড়িয়ে আমার মায়ের কাছে এসে তার কোলে মাথা গুজতাম। ভয়ে আমার আপাদমন্তক
কাঁপতে থাকত। তিনি আরও বলিয়াছেন, একদিন গুরুগন্ভীর শব্দ শুনে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে।
উঠল। ভীত হয়ে মায়ের কোলে আশ্রয় নিলাম। আমার মাতা এ অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন।

কোন কিছুকি দেখেছ? আমি উত্তর দিলাম না আম্মাজান। তারপর আম্মাজান বললেন, ভয় কি? যে
আল্লাহ তােমাকে সৃজন করেছেন। তাঁর কাছে হতে তােমার কাছে সতর্কবাণী আসছে। তুমি
অনর্থক চিন্তায় সময় নষ্ট, করােনা। খেলাধূলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ােনা। সকল অবস্থায় আল্লাহকে
স্মরণ -করবে। বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর বুদ্ধিমতী মাতা হয়রত ফাতেমা
(রহঃ) পূর্বেই বুঝতে পেরেছিল্লেন তার পুত্র অসাধারণ প্রতিভা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুবর্ণ পশরা
মাথায় করে দুনিয়ায় আগমন করেছে। ভবিষ্যতে এ সন্তানের সুকীর্তির কারণে সমস্ত পৃথিবী।
আলােকিত হয়ে যাবে। এ কারণে পুত্রের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন।

বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী ( রহঃ ) এর জীবন

Post a Comment

0 Comments